উপজেলার পটভূমিঃ
সাটুরিয়া উপজেলার সদর দপ্তর বালিয়াটি। প্রশাসনিকভাবে বালিয়াটি সাটুরিয়া উপজেলার ০৩ নম্বর ইউনিয়ন। সাটুরিয়া উপজেলার পটভূমির সাথে বালিয়াটি ও বালিয়াটি জমিদারবাড়ি নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। পাঁচটি জমিদারবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ বুকে নিয়ে জ্বাজ্জল্যমান বালিয়াটি গ্রাম। পূর্ববাড়ী বলে পরিচিত এ জমিদার বাড়ীটিতে ১৯৮৪ সালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা ম্যাজিস্টেট এর আদালত স্থাপিত হওয়ায় স্থানটির গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে জমিদারের বাগান বাড়ীতে উক্ত অফিস স্থানান্তরিত হয়েছে এবং জমিদারদের সুরম্য অট্টালিকা পর্যটন স্পট হিসেবে প্রত্নত্ত্ববিভাগের নিয়ন্ত্রাধীন রয়েছে। একটি নিম্নবিত্ত সাহা পরিবার থেকে বালিয়াটি জমিদার বংশের উদ্ভব । এ দেশে ইংরেজ বেনিয়াদের আগমণের পূর্বে বালিয়াটির নাম ছিলো বালিয়াতি। গাজীখালী বিধৌত এ অঞ্চলের উত্তর পাশ ঘেষা গাজীখালি প্রস্থে ও গভীরতায় ভয়ংকর ছিলো। তখন গাজীখালি নদীতে স্টিমার, লঞ্চ, গয়নার নৌকা চলত, কুমীর ভাসতো এ নদীতে। কিন্তু আজ সে গাজীখালি আর নেই। বর্ষায় ছোট ছোট নৌকা চলে; নদী মরে গেছে। বালিয়াটির পূর্ব দক্ষিণ পার্শ্বে চরপাড়া, পশ্চিম উত্তর পার্শ্বে চরভাটারা গ্রাম, দক্ষিণ পশ্চিম কিছু অংশকে আজও বলা হয় চর। এ ছাড়া উত্তর-পূর্ব পার্শ্বে জোয়ার আমতা গ্রাম। মানিকগঞ্জের ঘিওর থানাধীন বিনোদপুর ছিল জমিদারদের পূর্ব নিকট। মহেশরাম সাহা নামে জনৈক বৈশ্য বরেন্দ্র শ্রেণীর এক কিশোর নিতান্তই ভাগ্যের অন্বেষণে বালিয়াটি আসেন এবং পানের ব্যবসায়ীর বাড়িতে চাকুরী নেন। পরবর্তীতে এ বাড়ীর মেয়ে বিয়ে করে শ্বশুরের সঙ্গে ব্যবসা করে প্রথম শ্রেণীর ব্যবসায়ী হন। মহেশ রায়ের ছেলে ঘনেশ রায় পানের ব্যবসা করে আরো উন্নতি লাভ করে। ঘনেশরায়ের ঘরে গোবিন্দ রায় সহ ০৪ (চার) ছেলে জন্ম লাভ করে। গোবিন্দরায় বালিয়াটিতে বিয়ে করে বালিয়াটিতেই বসবাস করেন। গোবিন্দ রায়ের ছার ছেলে যথাক্রমে আনন্দরায়, দধি রায়, পন্ডিত রায় ও গোপাল রায়। এই চার ভাই প্রথমে একসাথে পড়ে পৃথক পৃথক পৃথকভাবে ব্যবসা শুরু করেন। উক্ত চার ভাই থেকেই বালিয়াটি গোলাবাড়ী, পূর্ববাড়ী, পশ্চিম বাড়ী মধ্যবাড়ী ও উত্তরবাড়ী নামে পাঁচটি বাড়ী জমিদার বাড়ীর সৃষ্টি হয়। আনুমানিক ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে উক্ত চার ভাইয়ের মাধ্যমেই জমিদার বাড়ীর গোরাপত্তন হয়।
বৃটিশ আমল হতেই সাটুরিয়া উপজেলা সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে বিশেষ পরিচিতি আছে। বালিয়াটিতে যাত্রানুষ্ঠানের জন্য তিনটি স্থায়ী মঞ্চ ছিল। নাট্যানুষ্ঠানের জন্য পশ্চিম বাড়ীতে ছিল সুরম্য নাট্যমঞ্চ যা বর্তমানে বিলুপ্ত। ষাটের দশকে বালিয়াটির বুকে যাত্রায় জোয়ার নেমে আসে। এ সময় সৃষ্টি হয় বিখ্যাত জয়কালী থিয়েট্রিক্যাল যাত্রা পাটিং অপরটি এ্যামাচার যাত্রা পাটি-১। ১৯৪৮ সালের পর জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতা যখন ছিলোনা, দেশ বিভাগ হয়ে গেল তখন বালিয়াটি দশ আনীর দুর্গা মন্দিরের সম্মুখস্থ নাট মন্দিরের দুর্গা পূজার সময় পূর্ব পাকিস্থান তথা আজকের বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ যাত্রাদল যেমন : বাবুল অপেয়া, তায়দূর্গা অপেরা, জগন্নাথ অপেরা, অভিনীত যাত্রাপালা বালিয়াটি তথা এ এলাকায় লোকজন উপভোগ করেছেন। সাটুরিয়া সঙ্গীত মূখর একটি উপজেলা। উপজেলা জমিদারদের পৃষ্ঠ পোষকতায় এখানে বড় বড় সঙ্গীতের আসর বসতো। গ্রামের আনাচ-কানাচ থেকে, হয়তোবা কোন বাড়ীর বাংলো থেকে নয়তোবা কোন বাড়ান্দা থেকে সন্ধ্যায় কিংবা বাতে সঙ্গীতের সুর ভেসে আসতো। বালিয়াটি রামকৃঞ্চ মিশন যে আয়োজিত শ্রীরামকৃঞ্চ জন্মোৎঘরে প্রয়াত জননন্দিত চিত্র পরিচালক শ্রী সুভাষদত্ত ও সমরেন্দ্র সাহা লাহোরের উপস্থাপনায় বালিয়াটিতে ভক্তিগীতি পরিবেশন করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন বেতার ও টেলিভিশনের অনেক শিল্পী কালের বিবর্তণে সাটুরিয়া উপজেলা ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় যেন এক উজ্জল পথিকৃত।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস